ডাকলেন না সত্যজিত্, ফিরে তাকাননি মৃণাল - এক রাশ ক্ষোভ কিংবদন্তি সাবিত্রীর
আমাকে তো বলা হতো ওর চোখে টালার ট্যাঙ্ক আছে।”
নিজস্ব প্রতিবেদন: সাবলীলভাবে নিজে কাঁদতে পারেন আবার কাঁদাতেও পারেন। হাসির ক্ষেত্রেও তাই। ওটা যেন তাঁর ঈশ্বরপদত্ত ক্ষমতা! বাংলা সিনেমায় এমন বর্ণময় চরিত্র রূপায়নের ক্ষমতা হয়ত সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়েরই আছে। এ কথা খোদ মহানায়ক উত্তম কুমারই মেনে নিয়েছিলেন। তবে, কেন সত্যজিত্ রায়ের সিনেমায় জায়গা হল না? মৃণাল সেনও তাঁকে খুব কম সিনেমায় ব্যবহার করেছেন! ঋত্বিক কিংবা তপন সিনহা তো ফিরেই তাকাননি! এমন প্রশ্ন শুনে উত্তর সরাসরি দিতে পারেননি ৮১ বছর বয়সী কিংবদন্তি অভিনেত্রী। আসলে, তাঁর কাছে এর উত্তর ছিল না।
আরও পড়ুন- শাহিদ কাপুরের শ্যুটিং সেটে দুর্ঘটনা, মৃত্যু হল যুবকের
ছয় দশক ধরে অভিনয় জগতে থাকা সাবিত্রী দেবী বলেন, “এটা আমার কাছেও প্রশ্ন। কিন্তু জানি না কেন তিনি আমায় নেননি।” বেশ কয়েক বার সত্যজিত্ রায় তাঁর অভিনয়ের প্রশংসাও করেছেন। তিনি বলেন, ‘সত্যজিতকে বলেছিলাম, কই আমায় তো আপানার সিনেমায় নিলেন না!’ সত্যজিতের সঙ্গে কাজ না করতে পারায় অদৃষ্টের সঙ্গে তুলনা করেন সাবিত্রী। মৃণাল সেনকে নিয়েও তাঁর ক্ষোভ কম নয়। তিনি বলেন, যখন মৃণাল, মৃণাল হয়ে ওঠেননি, তখন তাঁর সিনেমায় কাজ করেছিলাম। দু-তিনটে ছবি করেছি। এর পর আর ফিরে তাকাননি প্রয়াত মৃণাল। সাবিত্রী দেবীর কথায়, মৃণালকে দিয়ে আমি ‘প্রতিনিধি’ ছবি করিয়েছিলাম। আর তপন সিনহা যখন সিনেমা তৈরি করতে গিয়ে চরম আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে পড়েন, বিনে পয়সায় তাঁর সিনেমা করে দিয়েছেন বলে দাবি করেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। তিনিও তাঁর একটা সিনেমাতে অভিনয়ের সুযোগ দেননি। শেষ জীবনে ঋত্বিক ঘটক তাঁর বাড়িতে এসে বলেছিলেন, “তোর জন্য আমি কিছু করতে পারলাম না রে! এ বার একটা ছবি বানাবোই।” সে আর হয়ে ওঠেনি ঋত্বিকেরও। সাবিত্রী দেবী বলেন, “এটা আমার দুর্ভাগ্য।”
তা হলে কি কোথাও হাসি-কান্নার অভিনয়ের মাঝে আটকে গিয়েছিলেন তিনি?
সাবিত্রী দেবী প্রত্যয়ের সুরে বলেন, “কোনও প্রশ্নই ওঠে না। জীবনে চারশোর বেশি সিনেমা করেছি। ঝগড়া-হাসি-কান্না নানা স্বাদের অভিনয় করেছি। আমাকে তো বলা হতো ওর চোখে টালার ট্যাঙ্ক আছে।” কেন? অকপটে সাবিত্রী দেবী বলেন, “কোন কথায় কতটা কাঁদতে হবে, ঝরঝরে কাঁদতে হবে কি-না, অনায়াসে সেটা করতে পারি।” আপনি কি কান্নার অভিনয়ে গ্লিসারিন ব্যবহার করতেন? ‘নিশি পদ্মে’র পদ্ম তখন বললেন, “জীবনে কখনও গ্লিসারিন ব্যবহার করেনি।”
আরও পড়ুন- প্রেমের শুরুতে গৌরীকে প্রথম কী গয়না উপহার দিয়েছিলেন শাহরুখ?
জীবনে অভাব খুব কাছ থেকে দেখেছেন। দেশভাগের যন্ত্রণা আজও ভুলতে পারেন না। এক সঙ্গে দুটো রসগোল্লা কোনওদিন খাননি। সে সময়ের স্মৃতি রোমন্থন করে সাবিত্রী দেবী বলেন, “এক দিন দিদি রসগোল্লা খেলে আমি রস খেতাম, আর যে দিন আমার ভাগ্যে রসগোল্লা জুটতো তো দিদি সে দিন রস পেত।” জীবনের প্রথম সিনেমার শ্যুটিংয়ে শাড়ি ধার করে স্টুডিয়োতে গিয়েছিলেন সাবিত্রী দেবী। তা-ও বাসে চড়ে। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে থিয়েটারে আসা। তার পর অভিনয় জগতে। খ্যাতি, সম্মান অনেক কিছুই পেয়েছেন, তবে স্বামী ঘর করার ভাগ্য হয়নি তাঁর। আক্ষেপ থাকলেও উত্তম কুমারের আদর, ভালবাসায় সেই ক্ষতে অনেকটাই প্রলেপ পড়ে। সাবিত্রী দেবী বলেন, “আমি কখনও তাঁর ঘর ভাঙতে চাইনি।” উত্তম কুমারই না কি তাঁর বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙে দিতেন! জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এখন তিনি বড্ড একা।
শেষ প্রশ্ন, জীবনে কোন স্বপ্নপূরণটা আপনার হলো না? প্রশ্ন শুনে সাবিত্রী দেবী ইস্তক থমাকলেন। একটু ভেবে বললেন, ভাল রোল পেলাম না! আজও যদি মনের মতো রোল পাই, তা হলে ফাটিয়ে দেব।
দেখুন, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের একান্ত সাক্ষাত্কার