'এলডোরাডো' খুঁজতে গিয়ে বিপদসংকুল পথে শঙ্কর, কেমন ছিল দেবের সেই অভিযান? পড়ুন ফিল্ম রিভিউ
রণিতা গোস্বামী
রণিতা গোস্বামী
গভীর ভয়ঙ্কর জঙ্গলে অভিযান, অ্যাডভেঞ্চারের গল্প শুধু বাংলা ছবি কেন বলিউডের ছবির ক্ষেত্রেও আমরা বিশেষ দেখিনি। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই দৃষ্টান্ত স্থাপন করল কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় পরিচালিত দেব-এর 'আমাজন অভিযান'। বিভূতিভূষণের গল্পের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছিল 'চাঁদের পাহাড়'। সেই অভিযানের গল্প লিখতে গিয়েই দেবকে শঙ্কর রূপে গড়ে তুলেছিলেন পরিচালক। 'চাঁদের পাহাড়'-এর পর শঙ্করের দ্বিতীয় অ্যাডভেঞ্চারের নামই 'আমাজন অভিযান'। যা আরও অনেক বেশি রোমহর্ষক।
গল্পটা কী?
গ্রামের ধুতি পাঞ্জাবি পরা মাস্টারমশাই শঙ্কর হঠাৎ কেন গেলেন আমাজনের মতো ভয়াবহ এক জঙ্গলে? এর পিছনে অবশ্য বিশেষ কারণ রয়েছে। আমাজনের 'এলডোরাডো' অভিযানের জন্য শঙ্করের সাহায্য চেয়েছিলেন ইতালিয় তরুণী অ্যানা। আসলে 'এলডোরাডো' অভিযানে গিয়েছিলেন অ্যানার বাবা মার্কো ফ্লোরিয়ান। কিন্তু তিনি সেই অভিযানে সফল হননি। মাঝপথেই ডুবে যায় জাহাজ। হারিয়ে যায় নক্সা। আর এই অসফলতাই হতাশগ্রস্ত করে তোলে মার্কোকে। নেশায় ডুবে রয়েছেন তিনি। বাবার এই অসম্পূর্ণ অভিযান পূর্ণ করতেই শঙ্করের সাহায্য চান অ্যানা (কারণ তিনি শঙ্করের আফ্রিকা অভিযানের গল্প পড়েছেন)। চিঠি লেখেন শঙ্করকে।
এরপরই শুরু হয় সেই রোমহর্ষক অভিযান, অ্যানা, মার্কোকে সঙ্গে করে শঙ্করের প্রথম গন্তব্য ছিল ব্রাজিল। তার সেখান থেকেই তাঁরা যায় 'এলডোরাডো' নদীর সন্ধানে। আর এই বিপদসংকুল আমাজনেই ঘোরা ফেরা করেছে শঙ্করের 'আমাজন অভিযান'-এর কাহিনী। যেখানে প্রতিপদে মৃত্যুর হাতছানি। ভয়ঙ্কর জন্তু জানোয়ারের আক্রমণ ঠেকাতে হয়েছে দেবকে। জাগুয়ার, থেকে শুরু করে অ্যানাকোন্ডা, কুমির কিছুই কেউই বাদ যায়নি। যদিও এখানে বলে রাখা ভালো এগুলোর বেশিরভাগই কিন্তু আসল, শুধুমাত্র কিছু কিছু ক্ষেত্রেই অ্যানিমেশন ব্যবহার করা হয়েছে।
আর গোটা সিনেমাটাই এগিয়েছে শঙ্করের এই অভিযানকে ঘিরে। তবে এই অভিযানের মাঝে অবশ্য ঘটে যাবে অ্যানার বাবা মার্কোকে অ্যানাকোন্ডার গিলে ফেলার মতো ভয়ঙ্কর একটা ঘটনা। আর এরপরই পুরো অভিযানকে চালিয়ে নিয়ে যান শঙ্কর।
তবে শেষ পর্যন্ত কী শঙ্কর সফল হবে তা না হয় নাই বা বললাম, এমন একটা সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে না দেখলে তার মজাটাই চলে যায়।
বিশ্লেষণ
'আমাজন অভিযান'-এর চিত্রনাট্য পুরোটাই ইংরাজিতে। যেটুকু বাংলা শোনা গেছে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের গল্প বলার মধ্যে দিয়ে। তবে পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় চিত্রনাট্য যেভাবে সাজিয়েছেন তাতে ভ্রমণপিপাসু সিনেমাপ্রেমীরা যে ছবিটি দেখে মুগ্ধ হবেন তা বলাই বাহুল্য। পাশাপাশি ভয়ঙ্কর সব জন্তুদের সঙ্গে শঙ্করের লড়াই মন কাড়বে ছোটদের।
পুরো সিনেমায় অ্যানিমেশন, 'এলডোরাডো' র সেট, ক্যামেরার কাজ, আবাহসঙ্গীত সিনেমাটিকে অন্যমাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। সিনেমায় বিশেষ কথা বলতে হয়নি দেবকে। তাই অভিনয় থেকে শুরু করে অন্যান্য নৈপুণ্যে শঙ্কর হিসাবে নিজেকে বেশ ভালো ভাবেই তুলে ধরেছেন অভিনেতা। তাই এই সিনেমায় দেবের প্রশংসা করতেই হচ্ছে। এছাড়াও মার্কোর চরিত্রে জেমস ও অ্যানার চরিত্রে শ্বেতলানার অভিনয়ও প্রশংসনীয়।
তবে কোথাও একটা যেন খামতি থেকে যায়, বিশেষ করে গোটা অভিযানে অ্যানাকে সঙ্গী হিসবে পেয়েছেন শঙ্কর। তবে তাঁদের মধ্যে কোনও রোম্যান্সের দৃশ্য চিত্রায়িত করা হয়নি সিনেমায়। দীর্ঘ অভিযানে এক সুন্দরি তরুণীকে পাশে পেয়ে তাঁর প্রতি শঙ্করের মতো যুবকের কোথাও একটা দুর্বলতা তৈরি হবে সেটাই স্বাভাবিক নয় কি! তবে এভাবে ছোটদের কথা ভেবেই হয়ত সিনেমাটিতে এধরনের কোনও দৃশ্য রাখেননি পরিচালক।
অন্যদিকে শুক্রবারই মুক্তি পেয়েছে সলমনের 'টাইগার জিন্দা হ্যায়'। তাই এই দুটি ছবির মধ্যে তুলনা চলেই আসে। তবে একটা কথা না বললেই নয়, সলমনের নেকড়ের সঙ্গে লড়াইয়ের থেকে দেবের আমাজনের ভয়ঙ্কর সব জন্তুদের সঙ্গে লড়াই থেকে অনেক বেশি রোমহর্ষক।
সে যাই হোক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় পরিচালিত দেবের 'আমাজন অভিযান'কে ৫ এর মধ্যে ৪ দেওয়াই যায়। আর 'টাইগার জিন্দা হ্যায়'কে ৫এর ২.৫এর বেশি দিতে পারলাম না।
আরও পড়ুন- সলমন-ক্যাটরিনা রোম্যান্স, অ্যাকশন সিকোয়েন্সে জমজমাট 'টাইগার জিন্দা হ্যায়'