68th National Film Award : '২০২২-এ আমার মূল ফোকাস হিন্দি ছবি', বললেন দেশের সেরা সুপ্রতিম
৬৮তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মঞ্চে সেরা বাংলা ছবি ঘোষিত হয়েছে 'অভিযাত্রিক'। আর এই ছবির হাত ধরেই জাতীয় মঞ্চে সেরা সিনেমাটোগ্রাফারের স্বীকৃতি পেয়েছেন সুপ্রতিম ভোল। জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর Zee ২৪ ঘণ্টার সঙ্গে কথা বললেন সুপ্রতিম।
দেবপ্রিয় দত্ত মজুমদার : ৬৮তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মঞ্চে সেরা বাংলা ছবি ঘোষিত হয়েছে 'অভিযাত্রিক'। আর এই ছবির হাত ধরেই জাতীয় মঞ্চে সেরা সিনেমাটোগ্রাফারের স্বীকৃতি পেয়েছেন সুপ্রতিম ভোল। জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর Zee ২৪ ঘণ্টার সঙ্গে কথা বললেন সুপ্রতিম।
অনেকদিন ধরেই বেশকিছু বাংলা ছবিতে আপনার কাজ প্রশংসা পাচ্ছে, তবে জাতীয়স্তরে পুরস্কার পাওয়া কি অপ্রত্যআশিত?
হ্যাঁ, এটা তো অনেক বড় পাওয়া। তবে আমার বাবার কাছে এটা একটা স্বপ্ন ছিল। আমি যখন থেকে কাজ করছি, তখন থেকেই প্রত্যেকবছর বাবা টিভিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষণায় চোখ রাখতেন, আর নানান প্রশ্ন করতেন। শেষে প্রশ্ন করতেন তুই কবে পাবি? তাই এটা আমার থেকে বাবার কাছে একটা বড় পাওয়া।
এর আগেও কি এমন কোনও ছবির জন্য মনে হয়েছিল, যে এটাও স্বীকৃতি পেলে ভালো লাগত?
এর আগে 'সহজ পাঠের গপ্পো'র জন্য আমার এটা মনে হয়েছিল। এটি আমার হৃদয়ের খুব কাছের একটা ছবি, তাই সহজ পাঠের গপ্পোও স্বীকৃতি পেলে ভালো লাগত। এছাড়াও হরিয়ানভি ছবি হিসাবে 'দাদা লক্ষ্মী' পুরস্কার পেয়েছে। সেখানেও আমার সিনেমাটোগ্রাফি, তাই ওটার মাধ্যমেও আমার আরেকটা ভালোলাগা পূরণ হয়েছে। ওটা ১০০ বছরের পুরনো একজন লোকশিল্পীর গল্প নিয়ে বানানো। আর ওটা যশ পাল শর্মার ডেবিউ ছবি। আমার প্রথম হিন্দি ছবি 'পঞ্চলাইট', ওটাও যখন জাতীয় পুরস্কার পায়নি, তখনও একটা খারাপ লাগা তৈরি হয়েছিল।
অভিযাত্রিকের জন্য তোমার কী ভাবনা মাথায় ছিল, যেটা জুরিদেরও মন ছুঁয়ে গিয়েছে?
এটা আমার কাছে বিশাল বড় পাওনা, যতদূর মনে পড়ে সুব্রত মিত্র, সৌমেন্দু রায়, অভিক মুখোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ, সুদীপ চট্টোপাধ্যায়ের পর কোনও বাঙালি সিনেমাটোগ্রাফার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে বলে আমার হয় না। জানি না আমি ভুল কিনা। অভিযাত্রিক ছবিটা বাংলা ছবি হিসাবে একটা বড় স্কেলের ছবি। এটার জন্য গৌরাঙ্গ জালান, মধুর ভান্ডারকর, শুভ্রজিৎ মিত্র আমার উপর ভরসা রেখেছিলেন, তাঁর জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তবে চিত্রনাট্য যখন এসেছিল, তখন সেই ছবিটা আমার কাছ থেকে ঠিক কী চাইছে সেটা যদি স্পষ্ট ছিল। তাই ছবিটা জাতীয় পুরস্কার না পেলেও এই ছবিটা যে একটা জায়গায় পৌঁছবে তা জানতাম। আর ছবি সাদা-কালো, তাই সেটা একটা অতিরিক্ত চ্যালেঞ্জ ছিল। অভিযাত্রিক আর অপরাজিত, এই দুটো ছবিকেই ইউনিক করে তোলার চেষ্টা করেছি। আর অভিযাত্রিকের মধ্যে একটা কাব্য জড়িয়ে আছে, তাই সেটাকে তুলে ধরা এবং কনট্রাস্টকে নূন্যতম জায়গায় নিয়ে আসা আমার কাছে কঠিন ছিল।
এই মুহূর্তে কি আপনি মুম্বইতে কি নতুন কোনও কাজে ব্যস্ত?
আমি ৩-৪ ছবি করব এমন সিনেমাটোগ্রাফার আমি নই। সাধারণত বছরে ১ করেই ছবি করি। একমাত্র ২০১৯-এ 'দ্যা লক্ষ্মী', 'গুলদস্তা', 'অভিযাত্রিক' শ্যুট করেছি। এছাড়া যে ছবি হাতে রয়েছে, সেগুলি মানুষ আসতে আসতে জানতে পারবেন। টাকার জন্য কাজ আমি করি না, আমার ভালো লাগলে তবেই আমি কাজ করি। তবে চেষ্টা করি প্রথম থেকে ছবির সঙ্গে থাকতে। এই মুহূর্তে দুটি হিন্দি ছবির কাজ করছি, যদিও সেটার শ্যুট শুরু হয়নি। আর একটা মালায়ালম ছবির কথাও চলছে। তবে ২০২২ থেকে হিন্দি ছবিই আমার এখন প্রথম ফোকাস। তবে বাংলা ছবিও করব।
জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর প্রথম ফোন কার কাছ থেকে পেয়েছেন?
প্রথম মেসেজ করেছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায়, আর প্রথম ফোন করেন জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত সমালোচক উৎপল দত্ত।
সবশেষে সুপ্রতীম ভোল বলেন, যিনি ৬৮তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষণা করছিলেন, তিনিও একজন বিখ্যাত সিনেমাটোগ্রাফার, ধরম গুলাটি। উনি 'রুদালি' ছবির 'দিল হুম হুম করে' গানটির সিনেমাটোগ্রাফি করেছিলেন। আর উনি আমাদের SRFTI-এর Faculty-ও ছিলেন। তাই ওঁর মুখ থেকে এই পুরস্কার ঘোষিত হওয়াটাও আমার কাছে একটা বড় প্রাপ্তি। আর এই পুরস্কার আমি বাবাকেই উৎসর্গ করছি। পুরস্কার পাওয়ার পর মা সবাইকে বলছেন, বোন বলছেন আমার আর কিছু চাই না, সেটা একটা ভালো লাগা।