রং বং সঙ: সেলেব টক
এসে গেল বসন্ত উত্সব। দোল মানেই হৃদয়ে দোলা লাগার দিন। খেলার ছলে দোদুল্যমান হৃদয়ে আরও কিছুটা বাতাস লাগানোর দিন। দোলের মধুর স্মৃতি গাঁথা হয়ে থাকে সকলের মনেই। সেরকমই কিছু রংবেরঙের স্মৃতি নিয়ে আমাদের সঙ্গে রং মেখে সঙ হলেন বং তারকারা।
এসে গেল বসন্ত উত্সব। দোল মানেই হৃদয়ে দোলা লাগার দিন। খেলার ছলে দোদুল্যমান হৃদয়ে আরও কিছুটা বাতাস লাগানোর দিন। দোলের মধুর স্মৃতি গাঁথা হয়ে থাকে সকলের মনেই। সেরকমই কিছু রংবেরঙের স্মৃতি নিয়ে আমাদের সঙ্গে রং মেখে সঙ হলেন বং তারকারা।
উপল সেনগুপ্ত- আমি প্রতিবারই দোল খেলি। এমনিতেই খুব মজা হয়। এবারও হবে। প্রতিবার দোলেই সিদ্ধি খেয়ে টালমাটাল অবস্থা হয় আমাদের। একবার মনে আছে সিদ্ধি খেয়ে বন্ধুরা দল বেঁধে পাশের পাড়ার এক বন্ধুকে রঙ মাখাতে গিয়েছলাম। শরীর খারাপ বলে সঙ্গে যায়নি অমিত নামের আর এক বন্ধু। ফিরে এসে দেখি সিদ্ধি খেয়ে সে একেবারে চুড়। বসে আছে জলের ট্যাঙ্কের উপর। কাছে যেতেই বলতে শুরু করল ``আমার কাছে আসিস না। আমি এখন তূরীয় অবস্থায় আছি। রামকৃষ্ণের কাছাকাছি। তোরা পাপী তাপি মানুষ। আমাকে ছুঁস না।`` বলেই কঠিন কঠিন সংস্কৃত শ্লোক আওড়াতে শুরু করল। সংস্কৃত কিছুই বুঝি না। তাই বুঝতেও পারলাম না ওই শ্লোকের আদৌ কোনও মানে আছে নাকি। বহু কষ্টে তাকে সে বার নিরস্ত্র করতে পেরেছিলাম।
আর একবার মনে আছে দোলের দিন শুভেন্দু নামের এক বন্ধু সিদ্ধি খেয়ে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে শুরু করে দিয়েছিল। পরের দিন ওর একটা ইন্টারভিউ ছিল। অ্যাড এজেন্সিতে। কাঁদতে কাঁদতে শুভেন্দু দাবি করছিল ও নাকি ইন্টারভিউতে গিয়ে কিছুই আঁকতে পারবে না। অথচ ওর হাতে খাতা পেনসিল দিলে অসাধারণ সব ছবি আঁকছিল। যেই আমরা সবাই মিলে বলছিলাম `দারুণ ছবি আঁকছিস`, তখন সে দাবি করছিল সব ছবি নাকি অন্য কেউ এসে এঁকে দিয়ে যাচ্ছে। যাকগে। পরের দিন সে ইন্টারভিউটা দেয়। ভাল করেই দেয়। চাকরিটাও পেয়েছিল।
ঋধিমা- বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল আর দোল খেলি না। আসলে এখন দোলের ঠিক পরের দিনটাই শুটিং থাকে। তাই ইচ্ছা থাকলেও রঙ খেলতে পারি না। ছোট বেলায় ভাই আর বন্ধুদের সঙ্গে চুটিয়ে রঙ খেলতাম। কেউ রঙ না দিলে নিজেই বসে বসে রঙ মাখতাম। একবার ভাই ওর বন্ধুদের সঙ্গে রঙ খেলছিল। আমি বহুক্ষণ ধরে ওদের কাছে আমাকে রঙ দেওয়ার জন্য বায়না করছিলাম। কিন্তু ওরা আমাকে পাত্তাই দিচ্ছিল না। তারপর বহুক্ষণ ধরে ওদের কানের কাছে এমন ঘ্যানঘ্যান করলাম ওরা শেষপর্যন্ত বিরক্ত হয়ে আমাকে চ্যাংদোলা করে নর্দামায় ফেলে দিয়েছিল।
সিধু- তখন বেশ ছোট ছিলাম। পড়াতাম এক খুদেকে। সেই খুদের এক জ্যাঠতুতো দিদি ছিল। তাকে বেশ লাগত। বলতে গেলে সেই ছিল জীবনের প্রথম ব্যাথা। তা সেই ব্যাথার সঙ্গে এমনিতে কথা বলার বিশেষ সুযোগ ছিল না। বেছে নিলাম দোলের দিনটাই। আমি চিরকাল বিশ্বাস করি দোল হল ইঙ্গিত আদান প্রদানের সেরা দিন। তা সে দিনেই একটা ছক করলাম। আবীর নিয়ে চলে গেলাম ছাত্রের বাড়ি। ডেকে বললাম ``কিরে বাড়ির সবাই কোথায়?`` বাড়ির সবাই এসে উপস্থিত হলেন। সবার সঙ্গেই ডাক পড়েছিল সেই জ্যাঠতুতো দিদিরও। সবাইকে রঙ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকেও রঙ দিলাম। সঙ্গে হল ইঙ্গিত পূর্ণ দৃষ্টি বিনিময়। এখন ভাবতে হাসি পেলেও সেই বয়সে ব্যাপারটা বেশ সিরিয়াস ছিল। বেশ ভাল লাগারও। যদিও মাস্টারমশাইয়ের খোলস ছেড়ে সম্পর্কটা বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি। তবে আগের থেকে সম্পর্ক অনেক সহজ হয়েছিল।
লকেট চ্যাটার্জি- দোল কোনও দিনই খুব একটা খেলতাম না। আসলে রঙে ছোটবেলা থেকেই খুব ভয় পাই। উত্তর কলকাতায় থাকতাম। দোলের দিন দাদা আর দাদাদের বন্ধুরা দল বেঁধে পাড়ায় রঙ খেলতে বের হত। সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে আবীর দিত। দাদারা হাতের কাছে পেলেই জোর করে রঙ মাখিয়ে দিত। সেই ভয়ে দোলের দিন ঘরে দরজায় ছিটকানি দিয়ে লুকিয়ে বসে থাকতাম। ওই সময় কাউকেই বিশ্বাস করতাম না। মনে হত দরজা খুললেই এই বুঝি কেউ এসে রঙ দিয়ে যাবে।
আবীর চ্যাটার্জি- বছর দুই আগে দোলে সপরিবারে দল বেঁধে শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলাম। সেখানে দেখা হয়েছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তাঁকে পায়ে আবীর দিয়ে প্রণাম করেছিলাম। এটা আমার কাছে খুব স্পেশাল একটা ভাললাগার স্মৃতি।
ছোটবেলায় ভূতের মত রঙ খেলতাম আমি আর বোন। একটু বড় হওয়ার পর কানে একটা ইনফেকশন হওয়ায় বেশ কয়েক বছর পর পর দোল খেলতে পারিনি। আরও একটু বড় হওয়ার পর অবশ্য বন্ধুদের সঙ্গে দোল খেলেছি। তবে দোল নিয়ে কোনও দিনই সাঙ্ঘাতিক কিছু উৎসাহী ছিলাম না।